শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : টেলিভিশন অন করলে কানে যে আওয়াজ আসে তা শোনার উপযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। যা শুনি তা বাংলা নয়। নানা ভঙ্গিমার মিশেলে তারা কি যে বলতে চান, বোঝা কঠিন হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘সুন্দরের অনুপস্থিতি থাকলে শিল্প হয় না। শিল্প হতে হলে জানতে হয়, সাজাতে হয়। কারণ, শিল্প সুন্দর চর্চার জায়গা।’ জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রমিত বাংলাচর্চায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত দ্বিতীয় ‘জাতীয় ভাষা উৎসব’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার সকালে সংস্কৃতিমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বাংলা একাডেমি, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ ও মাই একাডেমি যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করে। তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয় বাংলা একাডেমিতে। একই সঙ্গে উৎসবের প্রথম দিনসহ বাকি দুই দিন ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ প্রাঙ্গণেও এই উৎসব আয়োজন করা হয়।
আসাদুজ্জামান নূর বর্তমান শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শারীরিক নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘বর্তমানে অভিভাবক ও অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ভাল রেজাল্টের নামে শিক্ষার্থীদের নান্দনিক সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করছেন।’ তিনি বলেন, ‘যে শিক্ষার মধ্যে সৌন্দর্য নেই, নান্দনিকতা নেই, সেটা কখনো শিক্ষা হতে পারে না। এ জন্য সত্য ও সুন্দরের মিশেলে একটি নান্দনিক শিক্ষার বিকাশে জাতীয় ভাষা উৎসব ভূমিকা রাখতে পারে।’ বিশ্বের কয়েকটি রাষ্ট্রের নজির তুলে ধরে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া, ইরান, জাপান এ সব রাষ্ট্রে আমি ভ্রমণ করেছি। সেখানে দেখলাম, তারা বিভিন্ন ভাষা জানলেও নিজের ভাষায়ই তারা কথা বলেন। তাদের বিলবোর্ড, দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠানের নাম নিজেদের ভাষায় লেখেন, যা আমাদের দেশে তেমনভাবে হচ্ছে না। অথচ পৃথিবীতে আমরাই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজের আঞ্চলিক ভাষার সমালোচনা করে বলেন, “আমাদের অঞ্চলে (সিলেটে) ‘ও’ এর উচ্চারণের ক্ষেত্রে বাড়তি একটা ও-কার যোগ করে উচ্চারণ করা হয়। এতে করে প্রমিত উচ্চারণ তো বটেই বানান বিভ্রাটেরও সৃষ্টি করে।” ‘এ রকম সমস্যা একেক জেলায় একেক রকম, যা ভাষার শৃঙ্খলা নষ্ট করে। সে বিবেচনায় প্রমিত বাংলা ভাষাচর্চার বিকল্প নেই’-যোগ করেন তিনি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের প্রজাতন্ত্রের ভাষা বাংলা। এ ভাষা রক্ত দিয়ে অর্জিত। শুধু সে কারণেই নয় বাংলা ভাষার বৈজ্ঞানিক বিবেচনায়ও শৃঙ্খলার কথা স্পষ্ট, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও তেমনভাবে লক্ষণীয় নয়। কিন্তু প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বাংলাকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয় না। ফলে বাংলা ভাষা ক্রমশ স্থিতিশীল হয়ে পড়ছে, যা একটি জাতীর জন্য শুভ লক্ষণ নয়।’ বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলে, ‘দশখানা বাইরের বই না পড়ে একখানা পাঠ্যপুস্তুক বোঝা যায় না। সুতরাং বইয়ের বিকল্প নেই।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘এইচএসসির পর মেডিকেল, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় বাংলা একটি অপ্রয়োনীয় বিষয় বলে বিবেচতি। সে কারণে বাংলার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও গুরুত্ব নেই।’ তিনি বলেন, ‘ভাষা শহীদদের স্মরণে অনেক কথা বলি, কিন্তু তাদের আত্মদানের তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারি না।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সুবহানী ও মাই একাডেমির পরিচালক মেজর (অব.) এ টি কে এম ইকবাল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনাপর্ব শেষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘দ্রুত পঠন’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বরভঙ্গি, বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ, সাবলীলতা ও সার্বিক উপস্থাপনা লক্ষ্য করা হয়। একই সময়ে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজেও এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় রয়েছে- বাংলা বানান, ভাষার নান্দনিকতা চর্চা, রচনা প্রতিযোগিতা, পদ্য লিখন ও পঠন প্রভৃতি। জাতীয় ভাষা উৎসবে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।